Monday, February 3, 2014

ল্যাপটপ কেনার গাইড ( যারা ল্যাপটপ কিনবেন বলে ভাবছেন তাদের জন্য দারুন টিপস)





ডেক্সটপ বনাম ল্যাপটপঃ
কম্পিউটার কেনার আগে দেখতে হবে কম্পিউটার কি কাজে ব্যবহার করবেন। ইন্টারনেট ব্রাওজিং, মুভি দেখা গান শোনা এসব কাজে সাধারণ কম্পিউটার যথেষ্ট। তবে গান ভালভাবে শোনার জন্য ভালো মানের সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজন পড়বে। নানা ধরনের গান মুভি ভিডিও ইত্যাদি জমিয়ে রাখার শখ হলে আপনার প্রয়োজন বেশি ধারণক্ষমতা আছে এমন হার্ডডিস্ক। আর আপনি যদি গেমার হন তাহলে আপনাকে কিনতে হবে হাই কনফিগারেশনের পিসি। এভাবেই প্রয়োজন মত বেছে নিতে হবে কোন কম্পিউটারটি আপনার জন্য উপযুক্ত। এতো গেলো ডেক্সটপ পিসি কেনার কথা।
এবার আসা যাক ল্যাপটপ পিসি কেনার কথায়। বেশিরভাগ ইউজারই এখন ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চান। কিন্তু ল্যাপটপ কিনবেন না ডেক্সটপ কিনবেন তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। কিভাবে ভুজবেন আপনার ল্যাপটপ কেনা উচিত কিনা?
১। আপনি কি ভ্রমনপ্রিয় বা নানাধরনের কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরে কাঠান।?
২। ঘরে বেশিক্ষণ কম্পিউটার এ কাজ করার সময় পান না?
৩। ঘরে বা অফিসের ডেস্কে জায়গা কম?
৪। ইচ্ছেমত ঘরের যেকোন জায়গায় বসে কম্পিউটিং করতে চান?
৫। এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা চরম?
এসবের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আপনার জন্য ল্যাপটপ পিসিই প্রয়োজন।
ল্যাপটপের সুবিধা অসুবিধাঃ
সব কিছুরই ভালো ও মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। প্রথমে অসুবিধার কথাই বলা যাক।
স্থায়িত্বঃ ল্যাপটপ বহনযোগ্য বলে বেশি নাড়াছড়া করা হয় এতে এর কোন যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে গেলে তা তা পাওয়া যায়না। আর গেলে ও তা বেশ বায়বহুল।
কার্যক্ষমতাঃ ল্যাপটপ পিসির তুলনায় ডেক্সটপ পিসি বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে। ডেক্সটপ পিসির সমান কার্যকরী ল্যাপটপ পিসি বেশ বায়বহুল।
কম্পাবিলিটিঃ মডেল, নির্মাতা, কোম্পানিভেদে ল্যাপটপের যন্ত্রাংশগুলোর মাঝে বেশ তারতম্য রয়েছে। যেগুলোর একটি আরেকটিকে সাপোর্ট করে না। তাই কোন যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে সেই যন্ত্রাংশ খুজে পাওয়া বেশ কষ্টকর ও বায়বহুল।
আপগ্রেডঃ ডেক্সটপের যন্ত্রাংশ যখন- তখন আপগ্রেড করা যায়। কিন্তু ল্যাপটপের ক্ষেত্রে তা ভীষণ ঝামেলার ব্যাপার। প্রসেসর, মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড করা যায় না। তবে রাম, হার্ডডিস্ক ও অপটিক্যাল ড্রাইভ ইত্যাদি আপগ্রেড করা যায়।
ল্যাপটপ বনাম নোটবুকঃ
ল্যাপটপ কিনবেন না নোটবুক কিনবেন? ল্যাপটপ ও নোটবুক এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অনেকে মনে করতে পারেন দুটোই তো একই জিনিস। আবার অনেকে মনে করতে পারেন নোট আকারের ল্যাপটপগুলোকেই নোটবুক বলে। নোটবুক ল্যাপটপের ছোট ভার্সন। এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। ল্যাপটপ ও নোটবুক এর পার্থক্য ভালো ভাবে বোঝার জন্য পাঠকদের জন্য তা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
আকারঃ ল্যাপটপের আকার বড় বা মাঝারী হয়। অপরদিকে নোটবুক এর আকার ছোট হয়।
প্রসেসরঃ ল্যাপটপের প্রসেসর ইন্টেল সেলেরন থেকে কোর আই সেভেন হয় অপরদিকে নোটবুক এর প্রসেসর ইন্টেল অ্যাটম, সেলেরন হয়।
হার্ডডিস্কঃ ল্যাপটপের প্রসেসর বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৫৪০০-৭২০০ আরপিএম গতির হার্ডডিস্ক অপরদিকে নোটবুকের কম ক্ষমতার সলিড স্ট্রিট হার্ডডিস্ক।
ডিসপ্লেঃ ল্যাপটপের ডিসপ্লে ১৩-২০ ইঞ্ছি ও নোটবুকের ডিসপ্লে ১৩ ইঞ্ছি এর কম হয়।
গ্রাফিক্স কার্ডঃ এনভিডিয়া বা ইন্টেল চিপ সেটের কার্ড থাকে ল্যাপটপে। আর নোটবুকে সাধারণ উপযোগী নুন্নতম গ্রাফিক্স কার্ড।
ডিস্ক ড্রাইভঃ ডিভিডি রম থাকে আর নোটবুকে থাকে না।
বিদ্যুৎ শক্তিঃ ল্যাপটপে বিদ্যুৎ শক্তি বেশি খরচ হয় আর নোটবুকে খুব কম হয়।
ব্যাটারি লাইফঃ ল্যাপটপে ৩-৮ ঘণ্টা আর নোটবুকে ৩-১২ ঘণ্টা।
ল্যাপটপের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ঃ
প্রসেসরঃ প্রসেসর হচ্ছে পিসির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ। বাজারে বিদ্যমান ল্যাপটপগুলোর দামের তারতম্য হয় প্রসেসরের উপর ভিত্তি করে। বেশ কিছু প্রসেসর রয়েছে, যা ল্যাপটপের মাদারবোর্ডের একেবারে সংযুক্ত করা থাকে। ল্যাপটপ প্রসেসর এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, কম তাপ উৎপাদন করে, আকারে ছোট এবং কার্যক্ষমতা ডেক্সটপ পিসির তুলনায় কম। ল্যাপটপে ব্যবহার করা হয় এমন প্রসেসর হচ্ছে ইন্টেলের অ্যাটম, সেলেরন, পেন্টিয়াম, ডুয়োল কোর ইত্যাদি সিরিজের প্রসেসর। ল্যাপটপের প্রসেসর নির্বাচনের সময় ক্লক স্পীড, ক্রাশ মেমরি, বাস স্পীড, কোরের সংখ্যা, গ্রেডের সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
হার্ডডিস্কঃ ল্যাপটপে সল্প পরিসরে বসানোর জন্য ২.৫ ইঞ্ছি ফর্ম ফ্যাক্টরের হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা হয়। এগুলো আকারে ছোট ও হালকা এবং কম গতিসম্পন্ন। তবে বর্তমানে নতুন ল্যাপটপগুলোতে হার্ডডিস্কের বদলে সলিড স্ট্রিট ড্রাইভ তথা এস এস ডি ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো হার্ডডিস্ক থেকে অনেক দ্রুত ডাটা ট্রান্সফার করতে পারে। আকারেও অনেক ছোট। ল্যাপটপ কেনার সময় নুন্নতম ৩২০ গিগাবাইট ও নোটবুক কেনার সময় নুন্নতম ১৫০ গিগাবাইট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হার্ডডিস্ক হওয়া প্রয়োজন।
রামঃ
ডেক্সটপে আমরা যে রাম ব্যবহার করে থাকি, ল্যাপটপের রাম গুলো এর প্রায় অর্ধেক। ছোট আকারের এই রামগুলোকে এখন ডিডিয়ার২ ও ডিডিয়ার৩ রামের প্রচলন বেশি। ডিডিয়ার ২ রাম কেনার আগে দেখে নিন এটা সর্বনিম্ন ৬৬৭ মেগা ও ডিডিয়ার৩ রাম সর্বনিম্ন ১০৬৬ মেগা কিনা?
স্পীকারঃ
ল্যাপটপ কেনার আগে এর সাউন্ড কীরকম তা পরীক্ষা করে নিন।
এর সাথে এর কিবোর্ড টাও চেক করে নিন।
গেমিং ল্যাপটপঃ
গেমিং ল্যাপটপের যে সুবিধাগুলো প্রয়োজনঃ কোর টু থেকে কোর সেভেন মানের প্রসেসর, এনভিডিয়া বা এটিআই চিপসেটের ৫১২ মেগাবাইট ১ গিগাবাইট ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স মেমরি, ১৬৬৬-১৩৩৩ বাস স্পীড সম্পন্ন রাম এবং ১৫-১৮ ইঞ্ছি ডিসপ্লে যা উচ্চ রেজুলেশন কাজ করে।
উপরিউক্ত টিপস কাজে লাগালে আপনি অবশ্যই পছন্দের মত ল্যাপটপ/ নোটবুক/ডেক্সটপ পিসি ক্রয় করতে পারবেন।




  ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় ভেবে নেয়া প্রয়োজনঃ
>আপনি কি কাজে ল্যাপটপ কিনবেন সেটা একটি বড় বিষয়। আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী ল্যাপটপের কনফিগারেশন ঠিক করুন। যেমনঃ বেশি মেমোরি প্রয়োজন এমন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার না করলে সাধারন কাজের জন্য কম বাজেটের সেলেরন প্রসেসরের ল্যাপটপ কেনাই যথেষ্ঠ। কিন্তু আপনি যদি গেম খেলা বা গ্রাফিক্সের কাজ করতে চান তাহলে উচ্চ গতি সম্পন্ন হাই কনফিগারেশনের ল্যাপটপই কেনা উচিত। কনফিগারেশন নির্ধারনের ব্যাপারে প্রসেসরের ক্লক স্পিডের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখুন।
>ল্যাপটপ যেহেতু কিছুটা দামী পণ্য তাই এক্ষেত্রে বাজেট বড় একটি বিষয়। এছাড়া বাজারে ল্যাপটপেরর প্রায় সব ব্র্যান্ডই ভালো। তাই ব্র্যান্ডের নামের চেয়ে ল্যাপটপ কেনার আগে দেখুন সাধ্যের মধ্যে কোন মডেলের ল্যাপটপে আপনি ভালো সবচেয়ে কনফিগারেশন পাচ্ছেন।
> ল্যাপটপ কেনার আগে দেখে নেয়া দরকার এর ব্যাটারি কতটুকু সময় ব্যাকআপ দিতে পারে। আপনার যদি আউটডোরে ল্যাপটপ বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে লক্ষ্য রাখুন ব্যাটারির ব্যাকআপ যেন একটু বেশি হয়।
> এখন অনেক জায়গাতেই স্বল্প মূল্যে ব্যবহৃত (সেকেন্ড হ্যান্ড) ল্যাপটপ পাওয়া যায়। এ ধরনের ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার আগে ভালোভাবে ভাবুন। কারন, সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ বিক্রির সময় বিক্রেতারা অনেক ত্রুটির কথা চেপে যান। আর ওয়ারেন্টি না থাকায় এসব ল্যাপটপ কিনে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতেও পারবেন না।
>ল্যাপটপের প্রধান সুবিধা হচ্ছে এটি খুব সহজেই বহন করা যায়। তাই যে ল্যাপটপ কিনবেন তার ওজন কেমন সেটা জেনে নিন। ছোট স্ক্রিনের ল্যাপটপের ওজন সাধারনত কম হয় বলে বহন করা সুবিধাজনক; এসব ল্যাপটপের দামও তূলনামূলকভাবে বেশি। তবে গ্রাফিক্সের কাজ যারা করবেন তাদের জন্য একটু বড় স্কিনের ল্যাপটপ কেনাই ভালো। তবে আউটডোরে বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন হলে কম ওজনের ল্যাপটপ কেনাই ভালো। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা হলো-আপনি কেমন স্ক্রিনের ল্যাপটপ ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
ল্যাপটপ কেনার পরে-
ল্যাপটপ কেনার পর ল্যাপটপ ব্যবহারে বেশ কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।এগুলো হলো-
>ল্যাপটপ বেশিক্ষণ কোলের উপর রেখে ব্যবহার করা উচিত নয়। বেশ কিছুদিন আগে একদল গবেষক ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের মাঝে এক জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, যারা কোলের উপর রেখে টানা অনেকক্ষণ ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তাদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
>দাম একটু বেশি হলেও ল্যাপটপ বহনে ল্যাপটপের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করুন। এসব ব্যাগ ল্যাপটপকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া ভ্রমণে ল্যাপটপ বহন করার জন্য কাঁধে ঝুলানোর সুবিধা যুক্ত (অনেকটা স্কুল ব্যাগের মতো) ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে বহনে সুবিধার পাশাপাশি আরেকটি সুবিধা হলো বাইরে থেকে বোঝাই যাবে না যে আপনি ল্যাপটপ বহন করছেন। তাই ছিনতাইকারীর দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
> ল্যাপটপে বিল্ট-ইন কিছু ডিভাইস আছে যেমনঃ ব্লু-টুথ, ওয়াই-ফাই, ইনফ্রারেড ইত্যাদি। প্রয়োজন না থাকলে ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় এসব ডিভাইস বন্ধ করে রাখুন। এতে ব্যাটারির শক্তি খরচ কম হবে।
> ডিসপ্লে সেটিংস থেকে বিভিন্ন অতিরিক্ত ফিচার যেমনঃ ClearType fonts , fade effects ইত্যাদি বন্ধ করে রাখুন। ফলে শক্তি খরচ কিছুটা কম হবে।
> ল্যাপটপে গেম খেলা বা কোন কিছু টাইপ করার জন্য এক্সটার্নাল কী-বোর্ড এবং মাউস ব্যবহার করুন। কারন, এসব ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহারে ল্যাপটপের টাচ প্যাড এবং কি-বোর্ডের আয়ু কমে যাবে।
>ঘরে বা বিদ্যুত ব্যবহারের সুবিধা আছে এমন স্থানে সরাসরি বিদ্যুত ব্যবহারের মাধ্যমে ল্যাপটপ চালান। প্রত্যেকটি ল্যাপটপের ব্যাটারির একটি আয়ু আছে। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বার চার্জ হবার পর এই ব্যাটারিটি নষ্ট অর্থাৎ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়।
>ল্যাপটপ ডেস্কটপের মতো একটানা ব্যবহার করা ঠিক নয়। বেশ কয়েক ঘন্টা ব্যবহার করার পর ল্যাপটপ কিছু সময় বন্ধ রাখা উচিত।
>ল্যাপটপের এয়ার ভেন্টটি নিয়মিত পরিষ্কার করুন। কারন এয়ার ভেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হবে যা ল্যাপটপের জন্য ক্ষতিকর
>খাবার ও পানীয় থেকে ল্যাপটপ দূরে রাখুন। নাহলে অসাবধানতা বশত ল্যাপটপের উপর পানি পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
>ল্যাপটপ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। কারন, হাত থেকে একবার পড়ে গেলেই ল্যাপটপের আয়ু শেষ!

No comments:

Post a Comment